ইমেইল লেখার সঠিক নিয়ম: কী লিখবেন ও কী এড়িয়ে চলবেন


ই-মেইল লেখার নিয়ম জানাটা বর্তমানে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আজকের দিনে ইমেইল আদান-প্রদান আমাদের প্রতিদিনকার কাজগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। এই ইমেইল আমরা যেমন সাধারণ আলাপচারিতার জন্যও ব্যবহার করছি, তেমনি কর্পোরেট জগৎ, চাকরি, ব্যবসা, এগুলোতেও ব্যবহার করছি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কী করে ফরমাল ইমেইল লিখতে হয়। তাই প্রথমেই জেনে নেয়া যাক ইমেইল কি।


ইমেইল কি?

ইমেইল হলো ডিজিটাল কম্পিউটার দ্বারা প্রেরিত এবং গৃহীত বার্তা, যা নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে কাজ করে৷ তাই বলা যায়, ইন্টারনেটের সাহায্যে, এক সিস্টেম থেকে অন্য সিস্টেমে বার্তা আদান প্রদানের পদ্ধতিকে Electronic Mail বা সংক্ষেপে E-mail বলা হয়, যার বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে ‘বৈদ্যুতিক চিঠি’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হয়। রে টোমলিনসনকে বলা হয় ইমেইলের জনক, তিনিই সত্তরের দশকে সর্বপ্রথম ARPANET-এর জন্য দু’টি কম্পিউটার সিস্টেমের মধ্যে যোগাযোগ ঘটান।

প্রথমদিকে, ইমেইলের ব্যবহার কেবল একই কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, বর্তমানে এর সাহায্যে একাধিক প্রাপকের কাছে একই সময়ে একই বার্তা পাঠানো যায়। প্রাপক বিবেচনায় ইমেইল ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে, যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছে কোনো বিষয়ে আবেদন করতে হলে, কিংবা অফিসের বসের কাছে প্রজেক্ট জমা দিতে হলে ফরমাল ইমেইলের প্রয়োজন হয়৷ অন্যদিকে আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবের কাছে ইনফরমাল ইমেইলেই হয় যোগাযোগ। তাই শুরুতেই ইনফরমাল এবং ফরমাল ইমেইল বলতে কী বোঝায় তা জানা প্রয়োজন।


ইমেইলের প্রকারভেদ: ফরমাল ও ইনফরমাল ইমেইলঃ


ফরমাল ইমেইল: 

ব্যবসা কিংবা অফিসের কাজের জন্য যে সকল ইমেইল লেখা হয়, সেগুলোই ফরমাল ইমেইল নামে পরিচিত। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা, বা কাজের পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো বর্ণনা করতে আমরা ফরমাল ইমেইল ব্যবহার করি। অচেনা কাউকে ইমেইল করতে হলে, বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে ফরমাল ইমেইলের বিকল্প নেই। যদিও ফরমাল ইমেইল লেখার জন্য ফরমাল রাইটিং স্টাইল প্রয়োজন, তবুও এর ভাষা যেন সহজ ও বোধগম্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

ইমেইল লেখার নিয়ম পুরোপুরিভাবে মেনেই একটি ফরমাল ইমেইল লেখা প্রয়োজন। একটা পারফেক্ট গ্রিটিং, ওপেনিং লাইন এবং ইমেইল বডি, ক্লোজিং, এবং শেষে সাইন-অফ, এই কয়টি বিষয় ফরমাল ইমেইলে থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি, কোন বিষয় নিয়ে ইমেইল লেখা হচ্ছে, তা অবশ্যই সাবজেক্ট লাইনে উল্লেখ করতে হয়। সাবজেক্ট লাইন হবে সংক্ষিপ্ত, সহজে বোধগম্য। এছাড়া ইমেইলের মূল উদ্দেশ্য বোঝাতে [Meeting], [Important], [Urgent], [Mandatory], [Follow Up], ইত্যাদি কীওয়ার্ডও ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে যোগ করা যেতে পারে। ইমেইলের শেষটা যেন মার্জিত ও আন্তরিক হয়, সেদিকেও নজর রাখা প্রয়োজন।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ফরমাল ইমেইল হলো প্রফেশনাল যোগাযোগ মাধ্যম, এবং এর গঠন একেবারেই সুনির্দিষ্ট। এতে কোনো অপ্রয়োজনীয় তথ্য থাকবে না, থাকবে না কোনো অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা। সুনির্ধারিত ও পরিষ্কার ভাষা ব্যবহারের কারণে মিস-কমিউনিকেশন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কাজে, অফিসের প্রয়োজনে, ব্যবসায়িক কাজের প্রয়োজনে ফরমাল ইমেইল ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইমেইলের আইনী ভিত্তিও রয়েছে, অর্থাৎ যেকোনো সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে ইমেইলকে Court Admissible Evidence বা আদালতে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। কাজেই ফরমাল ইমেইল লেখার সময় যথাসম্ভব সাবধানে, নিয়ম মেনে লেখা উচিত।


ইনফরমাল ইমেইল:

বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সাথে তথা পরিচিত মানুষদের সাথে যোগাযোগে আমরা ইনফরমাল ইমেইল ব্যবহার করে থাকি। ইনফরমাল ইমেইলের কোন ফরমাল রাইটিং স্টাইল নেই, নেই কোন পেশাদারী শব্দের ব্যবহারের বালাই। সহজ সরল ভাষাই ইনফরমাল ইমেইলের জন্য যথেষ্ঠ। আপনি এই ধরনের ইমেইল hi অথবা hey লিখে শুরু করতে পারেন। এখানে আপনার স্বাধীনতা অবাধ, তাই আপনি আপনার ইচ্ছেমতো ইমেইলকে বড় বা ছোট করতে পারেন, দিতে পারেন যত ইচ্ছা তথ্য- হোক তা প্রাসঙ্গিক কিংবা অপ্রাসঙ্গিক।


ফরমাল ও ইনফরমাল ইমেইল এর পার্থক্য: 

ফরমাল ও ইনফরমাল ইমেইলের মধ্যকার মূল পার্থক্য হলো এদের ভাষা ব্যবহার এবং লেখন পদ্ধতি। ফরমাল ইমেইল লেখা হয় পরিশীলিত এবিং মার্জিত ভাষায়, ইনফরমাল ইমেইলের জন্য যা বাঞ্ছনীয় নয়। ফরমাল ইমেইল অনেক বেশি কাঠামোবদ্ধ, কাঠামোর বাইরে গেলে তা গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে। কিন্তু ইনফরমাল ইমেইলের নির্ধারিত কোন কাঠামো নেই।


ইমেইল লেখার নিয়ম: ৬টি ধাপে লিখে ফেলুন একটি ইমেইলঃ

ই মেইল কি তা নিয়ে আলোচনার পর আমরা ফরমাল ও ইনফরমাল ইমেইল কি তা নিয়ে আলোচনা করেছি। ফরমাল কিংবা ইনফরমাল, দুই ধরনের ই মেইল লেখার নিয়ম কিছু সাধারণ বিষয় ধারণ করে। ইমেইল লেখার নিয়ম নিয়ে আলোচনার সময়, একজন ইউজারকে ৬টি ধাপ মেনে চলতে বলে,


ই মেইল লেখার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সর্বপ্রথম একটি ইমেইল এড্রেস তৈরি করতে হবে।  জি-মেইল, হটমেইল, ইয়াহুমেইলের মতো প্রোভাইডারগুলোতে ফ্রি ইমেইল আইডি খোলা যায়। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে তাই ঝটপট একটি ইমেইল এড্রেস তৈরি করে নিন।

আপনার ইমেলের প্রাপক কারা হবে তার একটা তালিকা তৈরি করুন। যদি কেবল একজন ব্যক্তিই আপনার প্রাপক হয়, তবে To লেখা বক্সে তার ইমেইল এড্রেসটি লিখে ফেলুন। যদি একই ইমেইল অনেকজনকে একসাথে পাঠাতে চান, তাহলে প্রাপকদের তালিকাটিকে CC লেখা বক্সে লিখে ফেলুন। আর যদি আপনার প্রাপকদের থেকে অন্য সকলের ইমেইল এড্রেস লুকিয়ে রাখতে চান তবে প্রাপকের তালিকা BCC লেখা বক্সে কপি পেস্ট করে দিন।

Email body-তে লিখে ফেলুন প্রাপককে যা যা লিখতে চান। সেক্ষেত্রে প্রথমে Salutation, পরে কাঙ্খিত লেখাগুলো এবং শেষে Closing বসিয়ে ইমেইল লেখা সম্পন্ন করুন।

পুরো ইমেইল লেখা শেষ হলে পুনরায় সম্পূর্ণ লেখাটা পড়ে দেখুন। এক্ষেত্রে বানান এবং ব্যকরণগত কোন সমস্যা আছে কিনা, প্রাপকের ইমেইল এড্রেস সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কি না- এই সকল কিছু ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন। আপনার ইমেইল এখন প্রাপকের কাছে পাঠানোর জন্য তৈরি, Send লেখা বাটনে ক্লিক করলেই তা কাঙ্খিত প্রাপকের কাছে পৌছে যাবে।


ই-মেইল লেখার নিয়ম: ফরমাল ইমেইল লেখার কিছু জরুরী বিষয়ঃ

ক্যারিয়ার কোচ বারবারা প্যাচটার, কর্পোরেট জগতের গ্রিটিং থেকে শুরু করে মেইলিং এবং যাবতীয় বিষয়াদি নিয়ে তার দি এসেনশিয়ালস অফ বিজনেস এটিকেট  বইয়ে লিখেছেন। বইটিতে বারবার কর্পোরেট ইমেইলিং বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন, ফরমাল ইমেইল লেখার নিয়ম পুরোপুরিভাবে আত্মস্থ করতে বলেছেন, যা একজন ব্যাক্তিকে আরো স্মার্ট করে তুলতে পারে। আজকে আমরা সেখান থেকেই কিছু বিষয়ে আলোকপাত করবো।

কর্পোরেট জগতে পদচারণার প্রতিটি পদক্ষেপ হবে পেশাদার। সাধারণত চাকরির ক্ষেত্রে অফিস থেকেই মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে দেয়ার কথা। সেক্ষেত্রে সমস্যা নেই, নাম পদবি যুক্ত করে প্রতিষ্ঠানের ডোমেইনের মেইল দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হয়, যখন পার্সোনাল মেইল ব্যবহার করবেন। মেইল অ্যাড্রেসে স্পষ্টভাবে আপনার নাম থাকবে এবং কোনো সংখ্যা দিতে পারেন। আদিকালের ফেসবুকীয় নাম একদমই পরিহার করতে হবে, যেমন প্রিন্সেস সাইফা, একাকী বালক ইত্যাদি যেন কোনোক্রমেই মেইলে না থাকে।


একটা মেইল খুলে পড়ে দেখা হবে কি না, সেটা কিন্তু সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে তার সাবজেক্টের উপর। তাই এই ক্ষেত্রে হতে হবে, কনসাইজ। মানে কথা কম, কিন্তু সেটুকুতেই দরকারি বিষয়টা বলে দিতে হবে। যেমন, উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে, মিটিং-এর সময় বদল, প্রেজেন্টেশন বাবদে আর্জেন্ট মিটিং, ডেডলাইন এক্সটেন্ড করা প্রসঙ্গে ইত্যাদি হতে পারে সাবজেক্টের কিছু হাতেকলমে উদাহরণ।

ইনফরমাল সম্বোধন ত্যাগ করতে হবে। যেমন, Hey you guys, Hi folks, Yo guys এ জাতীয় বাক্যাংশ এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। কারণ, এগুলো কর্মক্ষেত্রের

প্রফেশনাল ভাব বজায় রাখে না। এগুলোর বদলে হাই হ্যালো বলে ফার্স্ট নেম সম্বোধন করাই শ্রেয়। জেন্ডার নিরপেক্ষ সম্বোধনই বাছাই করা উচিত। নামের সংক্ষিপ্তরূপ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও জেনে নিয়ে করা ভালো। মানে হাই মাইকেল এর স্থলে হাই মাইক তখনই লেখা যাবে যদি জানা থাকে যে, মাইক বললে তিনি আপত্তি করবেন না।

বাস্তবজীবনে কথার ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন আবেগ-অনুভুতিতে কথা বলে থাকি। কিন্তু লেখার ক্ষেত্রে, আরও বিশেষ করে ফরমাল ইমেইলে কিন্তু তেমন একটা আবেগঘন হয় না। তাই বিস্ময়সূচক চিহ্নের ব্যবহার এমনিতেই কম হয়। আর তারপরও যেখানে আপনি নিশ্চিত নন যে, বিস্ময়চিহ্ন দেয়া সঠিক হবে কি না, সেসকল ক্ষেত্রে না ব্যবহার করাই উচিত হবে।

মেইলের একদম শেষে একটা সিগনেচার ব্লক সবসময় ব্যবহার করা ভালো। এতে যোগাযোগে সুবিধা হয়, আর টেম্পলেট সেভ করে রাখলে আপনারও আর বারবার লিখতে হবে না। এতে থাকবে নাম, পদবি, প্রতিষ্ঠানের নাম, আর কন্টাক্ট নাম্বার। তবে মাথায় রাখার বিষয় হল, এখানকার ফন্ট, কালার নরমাল রাখাই ভালো। বেশি রংচঙা হলে পেশাদার ভাবটা চলে যাবে।

মেইলে রিপ্লাই এবং রিপ্লাই অল বাটন দুইটি কিন্তু কাছাকাছিই থাকে, তাই সাবধান। রিপ্লাই অল দিলে পূর্বের মেসেজটা যার থেকে এসেছে, তার কাছে তো যাবে বটেই, সাথে আগের সেন্ডার যে যে রিসিপিয়েন্টদের মেইল পাঠিয়েছে সবার কাছে আপনার রিপ্লাইটা চলে যাবে। তাই রিপ্লাই দেবার আগে দুবার ভাবুন। আর সিসি/বিসিসি নিয়েও যত্নবান থাকবেন, সবসময় বিসিসি ব্যবহার করাই নিরাপদ, এতে এক সেন্ডার অন্যজনের কন্টাক্ট ডিটেইলস দেখতে পায়না। আর সিসি দিলে সবাই সবার তথ্য পেয়ে যায়, যা কাম্য নয়।

আমরা মানুষ মাত্রই আবেগপ্রবণ, আবেগের মাথায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক নাও হতে পারে। তাই আবেগের বশে কিছু লিখে না ফেলাই ভালো, কথায় আছে বেটার লেট দ্যান সরি; অর্থাৎ দেরিতে কাজটা করুন কিন্তু তারপরও এমন কাজ করে বসবেন না যার জন্য পরে লজ্জিত হতে হয়। তাই আবেগ প্রশমিত হয়ে গেলে, স্বাভাবিক অবস্থায় ঠাণ্ডা মাথায় মেইলের রিপ্লাই দিন।

অনেকসময়ই দেখা যাবে, টিমে অনেক ভিন্ন চিন্তার, ভিন্ন সংস্কৃতির, মতাদর্শের কলিগ থাকতেই পারেন। তাদের সাথে আপনার মত, পথ, চিন্তা, চেতনা নাও মিলতে পারে। বরং না মেলাই স্বাভাবিক, তাই এসকল ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের মত যেন তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। নিজের লেখার দ্বারাও যেন কেউ কষ্ট না পায়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।


ইমেইল পাঠানোর নিয়ম: ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ

ইমেইল লেখার নিয়ম নাহয় বুঝলাম, কিন্তু ইমেইল পাঠানোর নিয়ম? আলাদা করে ‘ইমেইল পাঠানোর নিয়ম’ বলে যে একটা ব্যপার আছে তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। তাই ইমেইল পাঠানোর জন্য নিচে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস তুলে ধরা হলো যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে,


১. প্রুফরিড! প্রুফরিড!! প্রুফরিড!!!

আপনার ভুল-ত্রুটি কিন্তু কোনোটিই প্রাপকের নজর এড়িয়ে যাবে না। তাই সতর্ক থাকুন, স্পেল চেকারের ভরসায় বসে থাকা বোকামো। লেখা শেষে নিজেই আরেকবার রি-চেক দিন। সেই বিখ্যাত মজার ঘটনাটি হয়তো অনেকেই জানেন, এক ভদ্রলোক স্পেলচেকারের উপর আশ্বস্ত হয়ে ছিলেন, নিজে প্রুফ-রিড না করেই মেইল পাঠিয়ে দেন। শেষে পাঠানোর পর খেয়াল করেন ‘Sorry for the inconvenience’ এর জায়গায় তিনি লিখে ফেলেছেন ‘Sorry for the incontinence!’


২. মেইল অ্যাড্রেস শেষে যোগ করুন

আপনি কিন্তু কখনই চাইবেন না, অর্ধেক, অপূর্ণাঙ্গ লেখা মেইল প্রাপকের কাছে চলে যাক। এজন্য সতর্কতার অংশ হিসেবে পুরো ইমেল বডিটি লেখার শেষে মেইল অ্যাড্রেস যোগ করতে পারেন। যাতে ভুলে হলেও কখনও সেন্ড বাটনে চাপ লেগে অসম্পূর্ণ মেসেজ চলে যাবে না।


৩. ইমেইলের রিপ্লাই দিন, যদিও সে মেইলটি ভুলে আপনার কাছে এসে থাকে

ইমেইলের রিপ্লাই দেয়া খুব ভালো অভ্যাস, ইমেইল আপনার কাছে এসেছে মানে, সাধারণত তা পড়ে সে অনুযায়ী অ্যাকশন নেয়া জরুরি। তার সাথে সাথে প্রেরক সেটির রিপ্লাই পেলে খুশি হন। এমনকি কখনও কোনো মেইল যদি ভুলেও চলে আসে, সেক্ষেত্রেও রিপ্লাই দিতে পারেন এই বলে যে, হ্যালো অমুক, আপনি বোধ হয় ভুলে মেইলটা আমাকে করেছেন। আপনি যেন সঠিক ব্যক্তির কাছে মেইলটা পাঠিয়ে দেন, সেজন্য এই রিপ্লাইটা দেওয়া। ধন্যবাদ। এতে উভয়পক্ষই লাভবান হবে।


৪. বার্তা পাঠানোর আগে পুনরায় দেখে নিন:

পাঠাবেন একবার, কিন্তু চেক করবেন দু’বার। তাই লেখার পর ই-মেইলটি কয়েক মিনিট এর জন্য না পাঠিয়ে রেখে দিন। “Gmail” ও এর মতো আরও কয়টি ই-মেইল সার্ভিস ও প্রোগ্রাম আপনাকে একটি “Unsend” নামক ব্যবস্থা দেয় যা দিয়ে আপনি পাঠিয়ে দেয়া ই-মেইল পুনরায় ঠিক করার জন্য ফেরত আনতে পারবে।


৫. ই-মেইলের আকার যথাসম্ভব ছোট রাখুন:

আপনার প্রাপককে বিশাল আকারের ই-মেইল পাঠিয়ে ঘাবড়িয়ে দেবেন না। বক্তব্য একইসাথে ছোট ও স্পষ্ট থাকা চাই। তাই বলে গুরুত্বপূর্ণ কথা, বা কথা স্পষ্ট রাখার জন্য লেখা সম্প্রসারণ করতে দ্বিধাবোধ করবেন না। যা শুধুমাত্র না বললেই নয়, তা বলে বক্তব্য শেষ করার চেষ্টা করুন। লেখায় বুলেট পয়েন্ট বা প্যারাগ্রাফ ব্যবহার করলেও লেখা বেশ সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত রাখা সম্ভব।


৬. নজর দিন ই-মেইলের শিরোনামের প্রতি:

প্রতিটি লেখার পেছনেই একটিই ছোট্ট চালাকি রয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হল পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। আপনার  লেখার শিরোনামের দায়িত্বটি তাই। আপনার, অর্থাৎ প্রেরকের নামের পরপরই পাঠকের যা দৃষ্টিগোচর হয় তা হল শিরোনাম। সুন্দর একটি শিরোনাম আপনার লেখাকে  সাহায্য করবে প্রাপকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ও তা ধরে রাখতে।


৭. ই-মেইলের মাধ্যমে কৌতুক, কৌশল, ফাঁদ (e-mail hoax) পাঠাবেন না :

ইন্টারনেটের দুনিয়ায় রয়েছে অনেক অপ্রয়োজনীয় (ও কিছু ক্ষেত্রে বিপদজনক) অলিগলি, যার প্রসার ই-মেইলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এসব ধরণের কৌতুক, কৌশল, বা ফাঁদ পেলে নিজে তা খুলে দেখা বা অন্যকে পাঠানো বা “forward” করা থেকে বিরত থাকুন, তা দেখতে বা পড়তে যতই চিত্তাকর্ষক হয়ে থাকুক না কেন। কেননা কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়ানোর পাশাপাশি, প্রায়শই এগুলো বিরক্তিকর ও সময় গ্রাসকারী হয়ে থাকে।


৮. অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবহার করুন:

অনলাইনের/ই-মেইলের  মাধ্যমে ম্যালওয়ার, “worms” বা ভাইরাস যাতে কম্পিউটারে না প্রবেশ করতে পারে বা আপনার থেকে যাতে অন্য কারো কম্পিউটারে না ছড়িয়ে পড়ে তা নিশ্চিত করতে ব্যবহার কর অ্যান্টি-ভাইরাস। যেকোন কম্পিউটারের দোকান অথবা ইন্টারনেটে বিনামূল্যে পেতে পারেন অ্যান্টি-ভাইরাস। তবে ফ্রি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার চেয়ে কিনে ব্যবহার করাটা অনেক বেশি ভালো।


৯. ই-মেইল “forward” করলে তার কারণ উল্লেখ করুন:

বলা বাহুল্য, প্রাপকের সাথে যত সুবিন্যস্ত যোগাযোগ স্থাপন করবেন, সম্পর্ক তত বেশি দৃঢ় হবে। তাই কী পাঠাচ্ছেন, প্রাপকের কাছে এর গুরুত্ব কী, বা কেন কিছু “forward” করছেন, তার উল্লেখ ও বিবরণ আপনার ই-মেইলকে করবে আরও গ্রহণযোগ্য।


১০. ই-মেইল গ্রহণ করার পর জানিয়ে দিন প্রেরককে:

ইন্টারনেটে কোনভাবে হারিয়ে গেল না তো ই-মেইলটি? “Spam” ফিল্টার খেয়ে ফেললো না তো? এসব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে প্রেরককে মুক্তি দিতে ই-মেইল পাওয়ার পরই পাঠিয়ে দিন একটি স্বীকৃতিস্বরূপ উত্তর।


১১. বড় আকারের অ্যাটাচমেন্ট পাঠানোর আগে অনুমতি চেয়ে নিন:

ই-মেইল বা ভেতরকার কোন ফাইলের সাইজ যদি বড় হয়, সেক্ষেত্রে প্রাপকের সুবিধার্থে তাকে আগে থেকে জানিয়ে দেয়া, বা তার অনুমতি চেয়ে পাঠানো ভালো। নতুবা তার সিস্টেমে সমস্যা হতে পারে, যার দোষ আপনার ই-মেইলের ওপরেই এসে পড়বে!


১২. একটি ই-মেইলে একটি বিষয় নিয়ে কথা বলুন:

“জটিল করলে জটিল হবে, সহজ করলেই সহজ…” তাই চেষ্টা করুন সব কথা একসাথে না নিয়ে এসে, কেবল একটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করার। অন্য বিষয়ের অবতারণা করতে চাইলে, লিখে ফেলুন আরেকটা ই-মেইল, জিনিসটা তো ফ্রি! (না হয় মোবাইল ডেটা একটু বেশিই খরচ করতে হল!)


১৩. যতিচিহ্ন যেন ঠিক থাকে ই-মেইলের:

দাড়ি, কমা, সেমিকোলন- এসব ব্যবহারের একটি যথাযথ কারণ রয়েছে। তা হল নিজের লেখা পাঠকের কাছে বোধগম্য উপায়ে পরিবেশন করতে পারা। তাই খেয়াল রাখা দরকার যাতে সঠিক জায়গায় সঠিক যতিচিহ্নটি ব্যবহার করেছেন কিনা তার প্রতি।


১৪. শর্টকাট বা আদ্যক্ষর সমষ্টির ব্যবহারে সাবধান:

ইদানীং শর্টকাট ব্যবহারের রীতি অনেকটা কমলেও, আমরা অনেকেই সময় বাঁচাতে কিছু শব্দ একসাথে দাঁড় করিয়ে একটা বাক্যের শর্টকাট বানিয়ে ফেলি। বর্তমান দিনের কিছু প্রচলিত শর্টকাট রয়েছে, যেমন:“Do you know?” হয়ে দাঁড়িয়েছে “DYK?”, “I don’t know.” কে বলা হচ্ছে “IDK.”। এমন হরেক রকমের এসব অক্ষরসমষ্টি ব্যবহার না করাই ভালো।


১৫. ছবির সাইজ ছোট করে পাঠান:

ই-মেইলে ব্যবহারের পূর্বে, বড় সাইজের ছবি ছোট করে ফেলুন। এতে করে মেইলটি খুলতে সুবিধা হয় ও ছবি দ্রুত ডাউনলোড হয়। অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইট আছে যা থেকে আপনি বিনামূল্যে ও কোন ঝামেলা ছাড়াই বড় ছবিকে ছোট করতে পারেন। যেমন: www.imageresize.org  ইত্যাদি।


১৬. বানানের ক্ষেত্রে সদা সাবধান:

ই-মেইল হোক কর্মক্ষেত্রের, ব্যক্তিগত জীবনের কিংবা কোন কারণে শখের বসে কিছু লেখার জন্য, বানান ভুলের মাফ নেই কোন সময়েই। লেখার সামগ্রিক সৌন্দর্য বর্ধনে তাই “send” বোতামটি ক্লিক করার আগে পুনরায় লেখাটি পড়ে নেয়াই শ্রেয়।


১৭. যদি পড়েন দ্বিধায়, “ধন্যবাদ” টেনে দিন লেখায়:

লেখার শেষটুকু ঠিক কি দিয়ে টানবেন বুঝতে পারছেন না? কি বললে মনরক্ষা ও স্বার্থরক্ষা দু’ই হয় তা মাথায় খেলছে না? দ্বিধায় পড়লে “ধন্যবাদ” বা “Thank you”- এর জুড়ি নেই! সকলেই বুঝবে এর অর্থ, আর ক্ষেত্রবিশেষে মানিয়েও যাবে শব্দটি। লেখায় তাই ইতি টেনে দিতে পারেন একটি “ধন্যবাদ” দিয়েই।


যে ২০টি ভুলে আপনার ইমেইল গুরুত্ব হারাবেঃ

উপরের টিপসগুলো মনে রাখার পাশাপাশি নিচের ২০টি ভুলের প্রতি নজর দিন। এই ভুলগুলো আপনার ইমেইলের গুরুত্ব হ্রাস করবে প্রাপকের কাছে, হতে পারে মিস কমিউনিকেশন।


১. অস্পষ্টভাবে বিষয় লেখা

আমরা বেশিরভাগ মানুষ ই-মেইলের বিষয়ের ঘরটা খালিই রেখে দিই। যারা লিখি, তারাও এমনভাবে লিখি যাতে করে প্রাপকের কাছে ই-মেইলটির মূল বিষয় অস্পষ্টই থেকে যায়। যেমন, একবার আমাদের এক লেকচারারই দেখিয়েছিলেন, তার কাছে একটা মেইল এসেছে তার বিষয়টা হচ্ছে, “Email to meet”- যা দেখে প্রাপক কখনোই একবারে ধরতে পারবে না ই-মেইলটি কী বিষয়ে পাঠানো হয়েছে।

প্রথমত, বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিতে হবে। এরপর এক লাইনে যতটা সম্ভব, প্রাপককে ই-মেইলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার প্রাপক ব্যস্ত। তার সময় নেই আপনার পুরো মেইলটি পড়ার আর ই-মেইলের বিষয়টাই হচ্ছে আপনার সম্পর্কে প্রাপকের ফার্স্ট ইম্প্রেশন।


২. নিজের পরিচয় না দেয়া

যেমনটা বললাম, আপনার প্রাপক ব্যস্ত। সে হয়ত আপনাকে মনেই রাখেনি, আবার আপনার যে তাকে ই-মেইল করার কথা ছিল তাও হয়ত তার মাথায় নেই আর। এজন্য, ই-মেইলের শুরুতেই নিজের পরিচয় দিন। আপনি কে, প্রাপককে কীভাবে চেনেন তা বলুন। এরপর কী নিয়ে লিখছেন, কেন লিখছেন, তা বলে নিন। না হলে শুরুতেই প্রাপক বিরক্ত হবে।


৩. ‘Urgent’ অপশনের অপব্যবহার

আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম, নতুন নতুন শিখলাম যে ফোনে আর্জেন্ট টেক্সট পাঠানো যায়। এরপর আর কী! ইচ্ছামত সবাইকে, বিশেষ করে বাবাকে আর্জেন্ট টেক্সট পাঠানো শুরু করলাম। আর বাবাও বারবার একেকটা টেক্সট দেখত আর ভড়কে যেত। কিন্তু এখন তো আমরা আর ছোট নেই, আর ই-মেইলের প্রাপকও আমাদের বাবার মত না। তাই আপনি যদি সাধারণ ইমেইলও আর্জেন্ট ই-মেইল হিসেবে পাঠান তাহলে আপনি শুধু শুধু প্রাপকের বিরক্তির কারণ হবেন।

ডেডলাইন, শর্ট নোটিস কিংবা জরুরি রিমাইন্ডার বাদে আর কোনো ইমেইল আর্জেন্ট ই-মেইল হিসেবে পাঠানো ঠিক না। সব মেইল আর্জেন্ট হিসেবে পাঠালে পরে আবার রাখালের মত আপনার আসল আর্জেন্ট মেইলই পাত্তা পাবে না।


৪. অতিরিক্ত বড় ফাইল পাঠানো

এ্যাটাচমেন্টটা যতটুকু সম্ভব, ততটুকু ছোটই যেন হয়। বড় ফাইল ডাউনলোড করা খুবই বিরক্তিকর আর তা প্রাপকের ডিভাইসের স্পেসও নষ্ট করে। এর চেয়ে বরং বড় ফাইলকে কম্প্রেস করে পাঠান। জিপ ফাইল ব্যবহার করলে অনেক সময় তা সিকিউরিটির কারণে আটকে যায়, তাই তা ব্যবহার না করাই ভাল। ওয়ার্ড, এক্সেল এবং এক্সেস ফাইল গুগল ডক, এক্সেল এবং এক্সেসের মাধ্যমে পাঠানো যায়।


৫. ব্যক্তিগত তথ্য ই-মেইলে জানতে চাওয়া

ব্যক্তিগত কিংবা স্পর্শকাতর অনেক তথ্য প্রাপক ই-মেইলের মাধ্যমে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তাই ই-মেইল কখনোই এসকল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানার জন্য একটি উপযোগী মাধ্যম নয়। শুধু যে প্রাপকেরটা জানতে চাইবেন না তাই নয়, বরং নিজের দিক থেকেও ই-মেইলে এধরনের তথ্য সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে প্রাপক অস্বস্তির শিকার হতে পারে।


৬. অনুপযোগী কথা

আপনি যদি মনে করে থাকেন যে ই-মেইল একদম পার্সোনাল, আপনি প্রাপককে যা বলবেন তা প্রাপক পর্যন্তই থাকবে তবে আপনি ভুল ভাবছেন। ই-মেইলের মাধ্যমে যেকোনো কথা অনেক তাড়াতাড়ি ছড়াতে পারে। তাই যেকোনো ধরনের অনুপযোগী কথা বলার আগে আরেকবার ভেবে নিন।


৭. CC এবং BCC এর ভুল প্রয়োগ

আমরা যখন একসাথে অনেক মানুষকে ই-মেইল করি, তখন এই দু’টির একটি অপশন ব্যবহার করে থাকি। CC অর্থাৎ Carbon Copy করলে, সেই প্রাপককে অন্যকোনো প্রাপক দেখতে পারবে, আর BCC অর্থাৎ Blind Carbon Copy করলে হবে তার উল্টোটা।

তাই কখনো CC করতে গিয়ে ভুলে BCC করলে, শুধু শুধু একজন প্রাপকের কাছে আরেকজনের নাম চলে যাবে যা আপনার ভাবগাম্ভীর্যতাও নষ্ট করতে পারে এবং অন্যরা এই ধারণা করতে পারে যে আপনি প্রাইভেসি রক্ষা করতে জানেন না। ই-মেইলের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন থার্ড পার্টিকে CC-তেও যুক্ত করা ঠিক না।


৮. গ্রামাটিকাল মিস্টেক

ই-মেইলকে ইনফরমাল মনে করে আমরা অনেক সময়ই গ্রামাটিকাল মিস্টেকগুলো গা করি না। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার লিখিত প্রতিটা বাক্য আপনাকে উপস্থাপন করে। ই-মেইলে গ্রামাটিকাল মিস্টেক দেখলে প্রাপকের আপনার সম্পর্কে বাজে ধারণার সৃষ্টি হবে।


৯. ট্রেইলসহ ই-মেইল করা

আপনি যখন ই-মেইলের রিপ্লাই দেন কিংবা আরেকজনকে মেইল ফরোয়ার্ড করেন, খেয়াল করলে দেখবেন তাতে কে কবে কত তারিখে কী পাঠিয়েছে- সব লেখা থাকে যার ফলে মেইলটা দেখতে একদম ফরমাল আর ভাল দেখায় না। তাই ফরোয়ার্ড কিংবা রিপ্লাই দেয়ার আগে ই-মেইলের প্রিভিয়াস ট্রেইলটা মুছে নিতে হবে।


১০. রাগান্বিত ই-মেইল পাঠানো

অনেক সময় আমরা অনেক রাগের কারণে কাউকে খারাপভাবে মেইল করে দেই। এর থেকে কখনো সুফল পাওয়া যায় না। তাই অনেক রেগে গেলে ই-মেইল সাথে সাথে সেন্ড না করে বরং ড্রাফটে রেখে তা পরে মাথা ঠাণ্ডা হলে পড়ে দেখতে হবে, আসলেই তা পাঠানোর যোগ্য কিনা।


১১. অযথা বড় ই-মেইল করা

ই-মেইল হতে হবে স্পেসিফিক এবং সংক্ষিপ্ত। আপনার প্রাপক ব্যস্ত। শুধু শুধু সৌজন্যমূলক কথা বলে তাকে বিব্রত করবেন না।


১২. সম্পর্ক অনুযায়ী শব্দের প্রয়োগ না করা

আমরা আমাদের বন্ধুকে যে ভাষায় মেইল করব, অফিসিয়াল মেইলের ভাষা অবশ্যই তার থেকে অনেক ভিন্ন হবে। ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ই-মেইলে শর্টকাট, ইমোটিকন এবং স্ল্যাং ব্যাবহার করা উচিত না।


১৩. অসময়ে ই-মেইল করা

অসময়ে ই-মেইল করা দুই রকমের হতে পারে। প্রথমত, আমরা জানি যে মেইল যে সময়ই করা হোক না কেন, ডিভাইসে নেট কানেক্ট করার আগ পর্যন্ত প্রাপক তা পাবে না। কিন্তু তাই বলে রাত ২টায় কিংবা ভোর ৫টায় মেইল পাঠানো যাবে না। এতে করে প্রাপকের সামনে আপনি আনপ্রফেশনাল হিসেবে পরিচিত হবেন। ই-মেইল পাঠানোর জন্য সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে অফিসটাইম কিংবা আপনার জানামতে প্রাপক যেই সময় মেইল চেক করে।

এতে করে আপনার ই-মেইলটি প্রাপকের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। দ্বিতীয়ত, যদি ই-মেইলে কোনো ডেডলাইন দেয়া থাকে, তাহলে এমন সময় ই-মেইলটি পাঠাতে হবে যাতে করে প্রাপক ডেডলাইন মিট করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়। ইলাভেন্থ আওয়ারে মেইল করা খুবই আনপ্রফেশনাল।


১৪. “Reply to all” অপশন অপ্রয়োজনে ব্যবহার করা

ধরে নিন, আপনার বসের প্রোমোশন হয়েছে। এজন্য সে তার পছন্দমত কিছু কর্মীকে নিজে একত্রে ই-মেইল করে ঘটনাটা জানাল। এর মাঝে আপনিও আছেন। এখন আপনি যদি শুভেচ্ছা জানিয়ে ই-মেইলের Reply অপশনে ক্লিক করেন, তাহলে শুধু আপনার বসের কাছেই ই-মেইলটি যাবে। কিন্তু যদি ‘Reply to all’ অপশনে ক্লিক করেন, তাহলে সকল কর্মীর কাছে আপনার ই-মেইলটি চলে যাবে যা অনেক সময় বিরক্তির সৃষ্টি করে।


১৫. ই-মেইলের নিচে সিগনেচার না দেয়া

ই-মেইলের নিচে সিগনেচার দেয়ার একটা অপশন থাকে। এটা ছাড়া পুরো ই-মেইলটাই অনেকটা খাপছাড়া দেখা যায় আর ব্যপারটা খুবই আনপ্রফেশনাল। তাই ই-মেইলে নিজের নাম, পদবী এবং প্রতিষ্ঠানের নাম সম্বলিত সিগনেচার তৈরি রাখতে হবে।


১৬. “To whom it may concern” লিখে ইমেইল শুরু করা

কোনো প্রতিষ্ঠানে মেইল করতে হলে, কার উদ্দেশ্যে মেইলটা যাবে তা জেনে, উল্লেখ করুন। To whom it may concern- লিখে ই-মেইল শুরু করলে, প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও সংশয় পড়ে যায়। এভাবে মেইল করা অনেকটা ফাঁকা গুলি ছোড়ার মত।


১৭. বর্ণনা ছাড়াই লিঙ্ক দেয়া

ই-মেইলে কোনো লিঙ্ক দিতে হলে অবশ্যই তাতে কী রয়েছে তা বলে দিতে হবে, আর লিঙ্কটা নিরাপদ কিনা তা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে লিঙ্ক দেয়া ঠিক না।


১৮. নেতিবাচক ই-মেইল করা

কোনো কর্মীকে ফায়ার করতে হলে, কাউকে কোনো জায়গা থেকে বাদ দিতে হলে কিংবা আপনার গ্রাহকের কোনো সুবিধা বন্ধ করতে হলে তা ই-মেইলের মাধ্যমে না বলে বরং সময় নিয়ে সরাসরি বলা উচিত।


১৯. জানা জিনিস আবার জানতে চাওয়া

আপনি প্রাপকের সম্পর্কে ইতোমধ্যে যা জেনে গেছেন, তা ই-মেইলের মাধ্যমে আবার জানতে চাওয়ার কোনো দরকার নেই। এতে করে প্রাপক হয় নিজেকে ছোট মনে করবে যে আপনি তার বিষয় কিছু মনে রাখেননি, কিংবা আপনাকে অমনোযোগী মনে করবে। উভয়ক্ষেত্রেই প্রাপক আপনাকে পরবর্তীতে কোনো তথ্য দিতে নিরুৎসাহিত হবে।


২০. সৌজন্যমূলক কিছু না বলে শেষ করা

ই-মেইলের জরুরি কথা শেষে ঐভাবেই পাঠিয়ে না দিয়ে সৌজন্যমূলক কিছু কথা তাতে লিখে দেয়া উচিত। নাহলে প্রাপক হীনমন্যতায় ভুগতে পারে এবং আপনার প্রতি বিরুপ ধারণাও পোষণ করতে পারে।